রান্নায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম
মাপার সরঞ্জাম
রান্নার রেসিপিতে আমরা প্রায়ই চা চামচ, টেবিল চামচ, এক কাপ ইত্যাদি মাপের কথা বলে থাকি। খাবার তৈরির উপকরণ মাপার কাজে এগুলোর ব্যবহার বিধিসম্মত বিষয়। মনে রাখতে হবে মাপার জন্য যে কাপ ব্যবহৃত হয় তা বড় চায়ের কাপ এর সমান।
চুলায় রান্না করার সরঞ্জাম
রান্নার কাজে হাঁড়ি, কড়াই, সসপ্যান, ফ্রাইপ্যান, তাওয়া, প্রেসার কুকার ইত্যাদি বিভিন্ন আকারের পাত্র ব্যহৃত হয়। আমাদের দেশে এ্যালুমিনিয়ামের পাত্রেই রান্নার প্রচলন বেশি। লোহার কড়াই এবং তামার ডেকচিতে কখনও টক খাবার রান্না করা উচিত নয়। কালাই ছাড়া তামার ডেকচিতে রান্না খাবারে ক্ষতিকারক।
প্রেসার কুকার: প্রেসার কুকার ষ্টেইনলেস স্টীলের তৈরি একধরণে মজবুত হাঁড়ি। এই হাঁড়ির ঢাকনার ভিতরের দিকে রবার বসান থাকায় হাঁড়ির ভিতরের বাষ্পের চাপে তাপ বৃদ্ধি পায় ও রান্না তাড়াতাড়ি হয়। প্রেসার কুকারের ঢাকনায় প্রেসারের চাকতি বসাবার জন্য ছিদ্র থাকে। ঢাকনার ছিদ্র দিয়ে বাষ্প বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসারের চাকতি বসাতে হয় এবঙ রেসিপির সময় অনুযায়ী চুলা থেকে নামাতে হয়। প্রেসার কুকার ঠাও করার পর ঢাকনার মুখ খোলা উচিত। মাছ, মাংস, চাল, ডাল, সবজি প্রেসার কুকারে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। ইলিশ মাছের কাঁটা নরম হয়ে মাছের সাথে মিশে যায়, প্রেসারে ভাপের পুডিং তাড়াতাড়ি জমে।
কাটার সরঞ্জাম
দা, ছুরি, বটি, কুরুনি, শিল-নোড়া, বিস্কুট কাটার নক্সা, ডোনাট কাটার, কিমার মেশিন ইত্যাদি সরঞ্জাম দিয়ে খাদ্য নানাভাবে কাটা হয়, কুরানো হয় এবং বাটা হয়। রান্নার কাজ শুরু করার প্রথমেই যেহেতু কাটার কাজটা সেরে নিতে হয় তাই এ বিষয়টির দিকে বিশেষ নজর রাখা দরকার। খেয়াল রাখতে হবে যেন কাটার সরঞ্জামগুলো যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। এগুলোতে যেন মরিচা না ধরে এবং জীবানু মুক্ত হয়।
সবজি কুরুনি (grater): আজকাল নারিকেল কুরুনি ছাড়াও বাজারে সবজি
কুরুনি বিক্রি হয়। সবজি কুরুনি টিনের তৈরি, এতে অনেক ছিদ্র থাকে। ছিদ্রগুলি ধারাল থাকে বলে সবজি কুরিয়ে নেয়া যায়। ছোট ছিদ্রের কুরুনিতে মিহি কুরানো হয় এবং বড় ছিদ্রের কুরুনিতে মোটা করে বা ঝুরি করে কুরানো যায়। লাউ দুধ রান্নার জন্য লাউ কুরিয়ে নেয়া হয়, আবার মার্মালেডের জন্য গাজর, আম ঝুরি করে কুরিয়ে নিতে হয়।
বিস্কুট কাটার নক্সা: বিস্কুটের খামির বেলে কাটার জন্য টিনের তৈরি নানা আকারের নক্সা পাওওয়া যায়। এই নক্সাগুলি গোল, চারকোণা, তিনকোণা, বরফি, তারা, ফুল মাছ ইত্যাদি আকারের হয়। এই নক্সাগুলির চারধার সমানবা ঢেউ খেলানো থাকে। যে দোকানে টিন কাটা হয় সেখানে নক্সা দেখিয়ে বিস্কুট কাটার নক্সা তৈরি করে নেয়া যায়।
ডোনাট কাটার: এটি ৭.৬ সে. মি. ব্যাসের একটি বিশেষ রকম গোলাকার নক্সা।এর মাঝখানে ছোট আর একটি গোলাকার টিন আটকানো থাকে, তাই ডোনাটের মাঝের অংশ কেটে বাদ যায়। ফলে ডোনাট ভাজার পর মাঝে ছিদ্র হয়।
মেশানোর সরঞ্জাম
খাবার তৈরি করার সময় নানারকম খাদ্য উপাদান একসাথে মিশানোর জন্য চামচ, ঘুটনি, বিটার, চালনী, গামলা, খঞ্চা ইত্যাদি সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়।
ফুলঝুরি: বিস্কুট কাটার নক্সার মতো এটিও টিনের তৈরি নক্সা। এই নক্সা ৩০ সে. মি. লম্বা মোটা তারে আটকানো থাকে। ব্যবহারের সময় প্রথমে ফুলঝুরি নক্সা গরম তেলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। তেল থেকে তুলে গোলানো ময়দায় নক্সার তিন-চতুর্থাংশ অংশ ডুবিয়ে সাবধানে তুলে নিয়ে আবার চুলার উপর গরম তেলে ডোবাতে হবে।
গরম তেলে পিঠা ফুলে উঠলে ফুলঝুরির মোটা তার ধরে আস্তে আস্তে ঝাঁকিয়ে পিঠা ছাড়িয়ে ফুলঝুরি তুলে নেবে। উল্লেখ্য ফুলঝুরি নক্সা গোলানো ময়দায় সম্পূর্ণ ডুবাতে হয় না। সম্পূর্ণ ডুবালে পিঠা ফুলঝুরিতে আটকে যাবে।
এগ বিটার/হুইস্ক (whisk): ডিম ফেটাবার জন্য এগ বিটার এবং হুইস্ক ব্যবহার করা হয়। মেরা, মেয়নেজ হুইস্ক দিয়ে করা যায়।
ছাঁচ (মোল্ড): এ্যালুমিনিয়াম, টিন অথবা কাঁচের তৈরি নানা আকারের মোল্ডে খাঁজ কাটা এবং নক্সা করা থাকে। ভাপের পুডিং তৈরির জন্য মোল্ড ব্যবহার হয়। মোল্ডে জেলাটিন, সবজি ও ফল দিয়ে তৈরি সালাদ জমানো যায়।
বেকিং এর সরঞ্জাম
তন্দুর বা ওভেনে কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, ক্রিমরোল, পাই, প্যাটিস এসব খাবার বেক করার জন্য নানা আকারের পাত্রের প্রয়োজন। ঠিক মাপ ও সঠিক আকারের পাত্র না হলে কেক, পাউরুটি ভাল বেক হয় না। বেকিং এর পাত্র টিন অথবা এ্যালুমিনিয়াম অথবা ওভেন প্রুফ কাঁচ দিয়ে তৈরি করা হয়।
কেকের পাত্র (কেক প্যান): নানা রকম কেক বেক করার জন্য গোলাকার, আয়তাকার, বর্গাকার ইত্যাদি বিভিন্ন আকারে পাত্র ব্যবহৃত হয়। এছাড়া নক্সা করা পাত্রেও কেক বেক করা যায়। পাউরুটির পাত্র সাধারণত আয়তাকার হয়ে থাকে।
মাফিন প্যানঃ মাফিন প্যানে ছয়টি থেকে বারটি পেয়ালা বসানো থাকে। টিন অথবা এ্যালুমিনিয়াম দিয়ে মাফিন প্যান তৈরি করা হয়। মাফিন, কাপকেক, টার্টপেস্ট্রি ও ডিনার রোল বেক করার জন্য মাফিন প্যান একটি বিশেষ ধরনের পাত্র।
বেকিং ট্রে ও শিটঃ বেকিং ট্রে ও শিট টিনের বা এ্যালুমিনিয়ামে তৈরি করা হয়ে থাকে। এর আকার বর্গাকার বা আয়তাকার হয়। বেকিং ট্রের চারধার ২. সে. মি. উঠানো থাকে। জ্যাম রোল বেকিং ট্রেতে বেক করা হয়। বিস্কুট, ক্রিমরোল, প্যাটিস এসব বেকিং শিটে বেক করা সুবিধাজনক।
পাইপ্যান: চারধার সামান্য উঁচু ও ঢালু আকৃতির একটি বিশেষ আকারের গোলাকার পাত্র এটি। পাই বেক করার জন্য এই পাত্রটি ব্যবহার করা হয়।
পেস্ট্রিব্রাশ: এটি এক ধরণের মোটা তুলি যা বেকিংএর কাজে ব্যবহার করার হয়। রং দেয়ার মোটা তুলিও পেস্ট্রিব্রাশ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মুরগীর পালক বা পাট দিয়ে ব্রাশ তৈরি করা যায়। পেন্ট্রিব্রাশের সাহায্যে বিস্কুট, পাউরুটি, প্যাটিস এর উপর ফেটানো ডিমের প্রলেপ দিয়ে ওভেনে দেয়া হয়।
পাইপিং ব্যাগ: মোটা কাপড়ের তৈরি কোণাকৃতি ব্যাগকেই পাইপিং ব্যগ বলে। পাইপিং ব্যাগের সঙ্গে টিনের তৈরি বিভিন্ন রকম নক্সা থাকে। ব্যাগের কোণাকৃতি মুখে এই নক্সা আটকে কেক, বিস্কুট বা পুডিং সাজান হয়। আজকাল প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি কেক সাজাবার সরঞ্জাম পায়া যায়। ট্রেসিং পেপার দিয়ে পানের খিলির মত তৈরি করে, সূচাকৃতি মুখ (দশম অধ্যায়ে ছবি) কাঁচি দিয়ে কেটে নিয়ে পাইপিং ব্যাগের মতো ব্যবহার হয়। পাইপিং ব্যাগে চাপ দিয়ে নক্সা করার কৌশল আয়ত্ব করে নিতে হবে। কাঁচা হাতে কেক সুন্দর করে সাজাতে না পারলে কয়েকদিনের অভ্যাসে হাত পাকা হয়ে যায়।
পাইরেক্স ডিস: বিশেষভাবে তৈরি এই কাঁচের পাত্র তাপে নষ্ট হয় না। ওভেনে বেক করার জন্য এই পাত্র ব্যবহার করা হয়। এতে পুডিং, সুফলে, মেকারনি চিজ ইত্যাদি বেক করা যায়।