গুরুত্বপূর্ণ মসলার পরিচিতি ও ব্যবহার
খাদ্যদ্রব্যকে সুস্বাদু, মুখরোচক ও সহজপ্রাচ্য করার জন্য ব্যবহার করা হয় মসলা। কিছু মসলার সঠিক ব্যবহার না জানলে খাদ্যদ্রব্যকে সুস্বাদু করা যায় না। সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুতের জন্য তাই জেনে নিন কতিপয় মসলার ব্যবহার।
* লবঙ্গ: ইন্দোনেশিয়ার জাজিবারে এক প্রকার গাছের কুঁড়ি হচ্ছে লবঙ্গ। পোলাও, বিরিয়ানি, মাংস ইত্যাদি রান্নাতে লবঙ্গ ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া কিছুক্ষণ মুখে রাখলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
* এলাচ: এটিও মূলত ভারত, বার্মা, বোর্ণিও ও ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মে। এলাচও মূলত সুগন্ধ যুক্ত একটি মসলা। কোরমা, কালিয়া, রেজালা ছাড়াও বিভিন্ন রকম পায়েস, হালুয়া, ফিরনিতে এলাচের ব্যবহার করা হয়।
* জিরা: জিরা মূলত আমাদের এই উপমহাদেশীয় একটি মসলা। এটি মূলত আমাদের দেশের অতি সাধারণ মানের রান্না থেকে প্রায় সব রকম রান্নায় ব্যবহৃত হয়। জিরা সুগন্ধযুক্ত। বিশেষ করে মাছ-মাংস, তরিতরকারি রান্নায় জিরা বেশী ব্যবহৃত হয়। জিরা খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে দেয়।
* তেজপাতা: পোলাও, মাংস, বিরিয়ানি, ডিম বুনা ইত্যাদি সুগন্ধি করার জন্য তেজপাতা ব্যবহার করতে পারেন।
* দারচিনি: একদা আরবরা এই দারচিনির জন্যই এশিয়াতে এসেছিল বাণিজ্য করতে। মূলত ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দারচিনি জন্মে। দারচিনি হল একপ্রকার গাছের ছাল। দারচিনি মিষ্টি এবং সুগদ্ধ যুক্ত। দারচিনি মাছ-মাংসের বিভিন্ন পদ ছাড়াও প্রায় সকল প্রকার মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
* কিসমিস: পোলাও বিরিয়ানি, মাংস, পায়েস, মিষ্টি বরফি ইত্যাদি রান্নায় কিসমিসের ব্যবহার খাবারে আনে বৈচিত্র। ভালো করে ধুয়ে বোঁটা ছাড়িয়ে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তারপর ব্যবহার করুন।
* আলু বোখারা: এটি টক মিষ্টি স্বাদ বিশিষ্ট। দেখতে খেজুরের মতো। মোগলাই রান্না, কাচ্চি বিরিয়ানি, পোলাও-এ ব্যবহার করতে পারেন। এটি দিয়ে চাটনিও তৈরি করতে পারেন।
* জাফরান: জাফরান পাউডার অথবা ফুলের শুকনো অংশগুলো ভিজিয়ে নিয়ে ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারের আগে অল্প গরম পানিতে ২০/৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা যায়। মাংস, মাছ, সবজিতে ব্যবহার করা যায়। তবে চালের তৈরি রকমারি খাবারে এর ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। সাবিত্রি বা পায়েস পাতা খাবারের সুগন্ধি বাড়াতে এ পাতা ব্যবহার করা হয়। পোলাও, পায়েসে এ পাতা ব্যবহার করা যায়।
* জায়ফল: এটি দেখতে অনেকটা সুপারির মতো। এর খোসা ভেঙে ভিতরে থেকে শাঁস বের করে নিয়ে গুঁড়ো করে রান্নায় ব্যবহার করতে হয়। জায়ফলের এই গুড়ো শুকনো তাওয়ায় ভেজে নিয়ে রান্নায় ব্যবহার করলে সুগন্ধ বেশি হয়। এটি ব্যবহার করতে হয় রান্নার শেষ পর্যায়ে। কাচ্চি বিরিয়ানি, আলুর দম, রেজালা, মাছের কালিয়া, কোরমা, পায়েস ইত্যাদিতে ব্যবহার করা যায়।
* জয়ত্রি বা জৈত্রি: জায়ফল ব্যবহার করলে সঙ্গে জয়ত্রিও ব্যবহার করবেন রান্নায়। বাজার থেকে শুকনো জৈত্রি কিনে শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়ো করে রান্নায় ব্যবহার করুন।
* পোস্তদানা: দেখতে অনেকটা সাদা সরিষার মতো। মাংস ও মাছে এটি ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারের পূর্বে পাতলা কাপড়ের মধ্যে রেখে ধুয়ে অল্প পানিতে ভিজিয়ে তারপর বেটে নিতে হবে। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি এবং রান্না ঘন করতে এটি ব্যবহার করা হয়।
* চারমগজ: সাদা রঙের দানা, দেখতে অনেকটা বাদামের মতো। ব্যবহারের আগে আধাকাপ চারমগজ আধাঘণ্টা দুধে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর দুধসহ চারমগজ বেটে ক্ষীরের সঙ্গে মিশিয়ে ঘন করে নামিয়ে গোলাপজল ছিটিয়ে পরিবেশন করুন। বরফিতেও চারমগজ ব্যবহার করা যায়।
* চিরঞ্জি দানা: দেখতে চারমগজের মতো। ক্ষীর ও বরফিতে ব্যবহৃত হয়।
* মেথি: সাধারণত ফোড়নে ও আচার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া করলা, পলতা জাতীয় তেঁতো তরকারিতে মেথির ভাজা গুঁড়ো ব্যবহার করলে তরকারির স্বাদ বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও যে সব মসলা রান্নায় ব্যবহৃত হয় তা হল-গোল মরিচ, শাজিরা, হিং, কালজিরা, আদা, ধনে, মৌরি ইত্যাদি।