রান্নার বিভিন্ন উপকরন

খাদ্যদ্রব্য গ্রহণযোগ্য, সুস্বাদু, রুচিসম্মত ও পুষ্টিকর করার জন্য বিভিন্ন প্রকার উপকরণ ব্যবহার করা হয়। তরল, নরম, শক্ত, মচমচে এবং জাল, মিষ্টি, টক, নোনতা খাবার রুচি পরিবর্তন করে। এসব বিভিন্ন পুষ্টিকর ও বিভিন্ন স্বাদের খাদ্য তৈরি করতে বহুবিধ উপকরণের প্রয়োজন হয়। খাবারের স্বাদ বাড়ানো জন্য ব্যবহৃত হয় মসলা। তাছাড়া খাবার ফাঁপানো হয়, ঘন করা হয়, ইচ্ছামত রং করা, স্বাদের ভিন্নতা আনা ইত্যাদিতে রাসায়নিক দ্রব্যও ব্যবহার করা হয়।


খাবার ঘন করার উপকরণ:


ময়দা, বেসন, এ্যারারুট, কর্ণফ্লাওয়ার, চালের গুঁড়া, নেশেস্তা এসব দিয়ে সুপ, স্টু ইত্যাদি জাতীয় খাদ্য ঘন করা হয়। চুলা থেকে নামাবার আগে এসব উপকরণ পানিতে গুলে খাবারে মিশিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নাড়তে হবে। ফুটে ওঠার পর পরই নামিয়ে নিলে খাবার মসৃণ ও ঘন হয়।

 

* বেসন: গম ভাঙ্গাবার মেশিনে ছোলার ডাল ভাঙ্গিয়ে গুঁড়া করে বেসন করা যায়। বেসনের ব্যবহার বহুবিধ। বেসন পানিতে গুলে দিলে ফুটে খাবার ঘন হয়। বেগুনী, আলুচপ বেসনের গোলায় ডুবিয়ে ডুবো তেলে ভাজা হয়। বেসন দিয়ে ডালের বড়াও অনেকে করেন। বেসন কড়াহি, বেসন চিল্লা পাঞ্জাবিদের পছন্দের খাবার। ডালমুটে বেসনের তৈরি বুন্দিয়া, সেমাই মেশানো হয়।

 

* কর্ণফ্লাওয়ার (cornflour): ভুট্টা থেকে তৈরি ময়দাকে কর্নফ্লাওয়ার বলে। কর্ণফ্লাওয়ার ধবধবে সাদা এবং পিচ্ছিল। চাইনিজ রান্নায়, সুপে এবং কাস্টার্ডে কর্ণফ্লাওয়ার বেশি ব্যবহৃত হয়। খাবার প্রস্তুতে কর্নফ্লাওয়ারের পরিবর্তে এ্যারারুট, নেশেস্তা ও ময়দাও ব্যবহার করা যায়।

 

* নেশেস্তা: সুজি ৫-৬ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ছেনে পাতলা কাপড়ে ছেঁকে নিলে যে মাড় বের হয় তাকেই নেশেস্তা বলে। গম থেকে নেশেস্তা নিতে চাইলে গম পানিতে ভিজিয়ে প্রত্যেক দিন পানি বদলাতে হবে। পঞ্চম দিনে গম বেটে দুধ বের করে নিতে হবে। নেশেস্তা দিয়ে কাস্টার্ড, হালুয়া, পাপড়ি ইত্যাদি তৈরি হয়।

 

ফাঁপাবার উপকরণঃ

 

পাউরুটি, কেক, সুফলে এসব খাবার ফাঁপাবার জন্য ঈস্ট, বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা, এবং মেরাং ব্যবহার করা যায়।

 

* ডিম: ডিম খাবার ঘন করে, ফাঁপায় এবং খাবারের স্বাদ, গন্ধ ও রং উন্নত করে। ডিম ফেটাবার কৌশলের উপর বিভিন্ন রকম খাবার তৈরি নির্ভর করে।

 

* হালকা ফেটানো ডিম: ডিমের সাদা ও কুসুম ভেঙ্গে মিশাবার জন্য যতখানি প্রয়োজন শুধু ততখানি ফেটানকে হালকা ফেটানো বলে। কাস্টার্ড, পুডিং ও হালুয়ার জন্য ডিম হালকা ফেটান হয়।

 

* ফোটানো ডিম: ডিমের সাদা অংশ জোরে ফেটলে ফেনা উঠে। ডিমের বরফি, প্যানকেক ইত্যাদির জন্য ডিম জোরে ফেটান হয়।

 

* জমাট ফেটান: ডিমের সাদা অংশ জোরে এবং খুব তাড়াতাড়ি ফেটলে ফেনা উঠে ঘন জমাট বাঁধে। একে মেরাং বলে। কেকের আইসিং, মেকারুন এবং সুফলের জন্য ডিমের সাদা ঘন জমাট করে ফেটতে হয়।

 

* বেকিং পাউডার: রেসিপির মাপে বেকিং পাউডার ব্যবহার না করলে খাবার ঠিক হয় না। অনেক দিনের পুরনো বেকিং পাউডার অল্প পানিতে দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে। পানিতে খুব সূক্ষ্ম বুদবুদ উঠলে বুঝতে হবে ব্যবহারযোগ্য রয়েছে। বেকিং পাউডার দিয়ে কেক, বিস্কুট, ডোনাট, প্যাককেক, নিমকপাড়া ইত্যাদি তৈরি হয়।

 

* বেকিং সোডা: গুড়ের বিস্কুট ও কলারকেকের রেসিপিতে বেকিং সোডা ব্যবহার করা যায়। প্যানকেক, বিস্কুটও বেকিং সোডা দিয়ে হয়। আধা কাপ টক দই অথবা কাপ গুড়ের সাথে উচা চামচ বেকিং সোডা মিশালে এক চা চামচ বেকিং পাউডারের সমান কাজ করে।

 

* ঈস্ট: ড্রাই ঈস্ট টিনে প্যাক করে বিক্রি হয়। বিদেশে নরম ঈস্ট কেকও ব্যবহার হয়। শুকনা ইস্টের টিনের মুখ খোলার পর খুব সাবধানে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। পাত্রে বাতাস ঢুকলে ঈস্ট নষ্ট হয়ে যায়। ঈস্টের প্যাকেটও কিনতে পাওয়া যায়। শুকনা ইস্ট ব্যবহারের আগে ৮-১০ মিনিট মৃদু গরম পানিতে ভিজাতে হবে। মৃদু গরম পানিতে ঈস্ট ফেনিয়ে না উঠলে সে ঈস্টে কাজ হবে না। ঈস্ট দিয়ে পাউরুটি, কেক, ডোনাট, নানরুটি ইত্যাদি তৈরি হয়।

 

আরো কিছু উকরণঃ

 

খাবার উপাদেয় ও পুষ্টিকর করার জন্য রান্নায় ব্যবহৃত উপকরণের মধ্যে বিভিন্ন মসলা ছাড়াও দুধ, দই; নারিকেল, সস, তেঁতুল ও নানা ধরণের রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে যা দিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে নানারকম সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবর তৈরি করা যায়। তরল টাটকা, ঘন, গুঁড়া ইত্যাদি নানা প্রকারের দুধ, ক্রিম এবং দুধের তৈরি দই, পনির, ঘোল রান্নায় নানাভাবে ব্যবহার করা হয়।

 

* চর্বিবিহীণ দুধ বা স্কম মিল্ক: মাঠা বা ঘোল এই পর্যায়ের দুধ। মেশিনে ফেটে দুধের ননি তুলে নিলে যে দুধ থাকে তা স্কম মিল্ক। গোয়ালারা হাতেই দুধ থেকে মাখন তুলে নিয়ে মাঠা তৈরি করেন।

 

* দই: সাদা ও মিষ্টি দু'রকমের দই-ই রান্নার কাজে ব্যবহার হয়। সাদা দই বেশি টক হলে কিছু চিনি দিতে হবে আবার কোরমা, রেজালা রান্নায় মিষ্টি দইয়ের সঙ্গে লেবুর রস দিলে স্বাদ ভাল হবে।

 

* গুঁড়া দুধ: চর্বিসহ এবং চর্বিবিহীন দু'রকম গুঁড়া দুধ পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশ গুঁড়া দুধ চর্বিবিহীন হলেও এতে উৎকৃষ্ট প্রোটিন থাকে। গুঁড়া দুধে ভাল ছানা হয় এবং দই বসে। এক কাপ গুঁড়া দুধে ৪ কাপ পান মিশালে তা টাটকা দুধের মতো ব্যবহার করা যায়।

 

* ঘন দুধ: দুধ ফুটার পর ঘন ঘন নেড়ে জ্বাল দিতে হয়। ঘন হয়ে পরিমাণে অর্ধেক হলে তাকে ঘন দুধ বলে। ঘন দুধ রেফ্রিজারেটরে ঠাণ্ডা করে ক্রিমের পরিবর্তে ব্যবহার হতে পারে।

 

* ননি ও ক্রিম: কাঁচা দুধ হাতে বা মেশিনে ফেটে ক্রিম তোলা হয। ক্রিম দেখতে ঘন দুধের মতো। এতে চর্বির পরিমাণ বেশি এবং পানির পরিমাণ খুব কম থাকে। খুব ঠাণ্ডা করে ক্রিম ফেটলে মাখনের মতো জমে যায়। একে হুইপড ক্রিম বা ফাঁপানো ননি বলে এই ক্রিম দিয়েই আইসক্রিম তৈরি হয় আইসক্রিম, ফল, সুফলে ইত্যাদি খাবার হুইপড্ ক্রিম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়

 

* কনডেন্সড মিল্ক: কনডেন্সড মিল্ক চিনি দিয়ে জ্বাল দেয়া ঘন দুধ, যা টিনের কৌটায় বিক্রি হয়। পুডিং, মিঠা টুকরা এই দুধ দিয়ে সুস্বাদু হয়।

 

* খোওয়া বা মাওয়া: দুধ ঘন করে একেবারে শুকিয়ে ফেললে মাওয়া হয়। ফুটাবার পর দুধ শুকিয়ে আসলে ঘন ঘন নাড়তে হবে। কিছু নরম থাকতে চুলা থেকে নামাতে হবে। ঘন দুধ ঠাণ্ডা হলে শুকিয়ে মাওয়া হয়। সাধারণত কারখানায় মাওয়া তৈরি কার হয়। মাওয়া দিয়ে মিষ্টি তৈরি করা হয়।

 

* পনির: কটেজ চিজ, ক্রিম চিজ এগুলো নরম পনির। ব্লু, রকফোর্ড আধাশক্ত এবং চেডার, এডাম, সুইস শক্ত পনির। ঢাকাই পনিরও শক্ত পনিরের অন্তর্ভুক্ত। পনির সবজি কুরুনিতে ঝুরি করে রান্নার জন্য ব্যবহার করা যায়।

 

* সিরাপ: চিনি ও পানি বিভিন্ন মাপে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে সিরাপ হয়। ১ কাপ চিনিতে ১ কাপ পানি মিশালে মধ্যম তারের সিরাপ এবং ১ কাপ চিনিতে ২ কাপ পানি মিশালে ঘন তারের সিরাপ হবে। মিষ্টি তৈরির সময় সিরার তার সব সময় এক রকম রাখতে হবে। তাই চুলায় রান্নার সময় রসগোল্লার সিরা ঘন হয়ে আসলে পানি ছিটিয়ে দিয়ে হালকা করা হয়।

 

* সিরকা: আখ, তাল, খেজুর ও জাম ইত্যাদি ফলের রস গাঁজিয়ে সিরকা তৈরি হয়। সাদা সিরকায় ৪ শতাংশ এসেটিক এসিড থাকে। সাইড ও মল্ট ভিনেগারে এসিডের মাত্রা বেশি থাকে। মল্ট ভিনেগার লাল সিরকা বলে পরিচিত। সাদা এবং মল্ট ভিনেগারের মিশ্রণে ওয়াইন ভিনেগার তৈরি হয়। পিকেল্স, আমের কাশ্মিরী আচার ইত্যাদিতে সাদা সিরকা এবং ঝাল মাংস রান্নায় ও আচারে লাল সিরকা দেয়া হয়।

 

* তেঁতুল: কাঁচা ও পাকা দু'রকম তেঁতুলই রান্নায় ব্যবহার হয়। পাকা তেঁতুল অল্প পানিতে ভিজিয়ে ছেনে নিয়ে, এই তেঁতুলের মাড় দিয়ে আচারও চাটনী তৈরি করা হয়। তেঁতুলের জন্যচাট, চটপটি, ভেলপুরীর স্বাদ হয় মজার।

 

* সস: খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য টমেটো সস, উস্টার সস, সয়াসস, অয়েস্টার সস, ফিস সস ইত্যাদি আরও বিভিন্ন রকমের সস রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

 

* উস্টার সস: এই সস টক স্বাদের হয়ে থাকে। উস্টার সসের পরিবর্তে তেঁতুল পানি দেয়া যায়। বিফ স্টেক, হ্যামবারগার স্টেক, ম্যাণ্ডারিণ ফিস এসব রান্নায় এই সস ব্যবহার করা হয়।

 

* সয়া সস: সয়াবিন করা হয়। তৈরি সসকে বলে সয়া সস। চাইনিজ রান্নায় এই সস ব্যবহার করা হয়। 

 

* স্বাদ লবণ: এটি একটি রাসায়নিক উপাদান। প্রকৃত নাম মনোসোডিয়াম গুটামেট বা আজিনোমটো। বাংলা নাম স্বাদ লবণ, একে টেষ্টিং সল্টও বলে। সুপ, মাংস, সবজি এসব খাবারে স্বাদ লবণ দিয়ে স্বাদ বেড়ে যায়। খাবারে যে পরিমাণ লবণ প্রয়োজন তার আটভাগের একভাগ স্বাদ লগ্ন দিতে হয়। স্বাদ লবণ বেশী খাওয়া ক্ষতিকর।

 

* পাউরুটি, ভাত: মাছ-মাং-এর কাটলেটে ও কোফতা তৈরিতে নরম পাউরুটির কুচি বা ভাত বেটে দিলে কোতা নরম হয়। কাটলেটের মাছের সঙ্গে আলু সিদ্ধ করে চটকে দেয়া যায়। হ্যামবারগারের মাংস নরম করার জন্য পাউরুটি দিয়ে মাখানো হয়।

 

* টমেটো পুরী (pure): যে কোন সবজি সিদ্ধ করে ছেনে নিলে তাকে প্যিউরেই বলা হয়। টমেটো প্যিউরেই সিরকা, চিনি ও অন্যান্য মসলা দিয়ে সস করা হয়।

 

* নারিকেলের দুধ: কুরানো ১ কাপ নারিকেল আধ কাপ ফুটান পানি দিয়ে ৮-১০ মিনিট রাখতে হবে। তারপর পরিষ্কার শিলে সামান্য থেতলে ভালভাবে নিংড়ে দুধ বের করতে হবে। একটিবড় নারিকেল থেকে এক কাপ ঘন দুধ বের করা যায়।

 

* কারি পাউডার: নানারকম মসলার মিশ্রণে কারি পাউডার তৈরি হয়। বিভিন্ন মসলা বিভিন্ন মাপে নিয়ে গুঁড়া করে মিমিয়ে কারি পাউডারের মধ্যে স্বাদ ও গন্ধের বৈচিত্র আনা যায়। দু'তিন রকম কার পাউডারের রেসিপি অষ্টম অধ্যায়ে দেয়া হয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম রান্নায় কারি পাউডার ব্যবহার হয়।

 

* টোস্টের গুঁড়া: কাটলেট, চপ, মাছ ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে টোস্টের গুঁড়ায় গড়িয়ে নিয়ে ডুবো তেলে ভাজা হয়। পাউরুটি টোস্ট করে গুঁড়া করা হয়। পাউরুটি টোস্ট না করে মিহি কুচি করে টোস্টের গুঁড়ার পরিবর্তে ব্যবহার হয়। এমনি পাউরুটির কুচিতে গড়িয়ে নিয়ে চাপ, কাটলেট ভাজলে রং সুন্দর হালকা বাদামি আসে।

 

* লেমন রাইও: লেবুর খোসার উপরের সবুজ পাতলা আবরণ মিহি ছিদ্রের সবজি কুরুনিতে কুরিয়ে নিলে মিহি ঝুরি পড়ে। লেবুর খোসার এই সবুজ অংশকে ইংরেজীতে লেমন রাইণ্ড বলে। কেক, কেকফ্রস্টিং, বিস্কুট, কোক্তা, কাবাব এসবে লেমন রাইও ব্যবহার করা হয়। সবজি কুরুনিতে অরেঞ্জ রাইওও নেয়া যায়।

 

* মিটস্টক: মাংসের হাড় বেশি পানিতে কয়েক ঘণ্টা সিদ্ধ করে ছেঁকে স্টক নেয়া হয়। এই মিটস্টক সুপ এবং অন্যান্য রান্নায় ব্যবহার করা যায়।

 

* পিকেন্সের মসলা: আচার, চাটনী, সস, পিকেল্স, এসব খাবারে নানারকম মসলা দিয়ে স্বাদ ও গন্ধ বাড়ান হয়। শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, হলুদ, গোলমরিচ, মৌরি, সরষে, তেজপাতা, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, ও শাজিরা, এই মসলাগুলোর সংমিশ্রণকে পিকেলসের মসলা বলে।

 

* আগার আগার: আগার আগার পিচ্ছিল জেলী-জেলী ভাব একপ্রকার সামুদ্রিক আগাছা, শুকাবার পরে রং সাদা ও খড়ের মত লম্বা খসখসে দেখায়। আগার আগার শুকনা খড়ের মত এবং গুঁড়া দু'রকমই কিনতে পাওয়া যায়। এটি মিষ্টি খাবার তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।

 

* এসেন্স: এসেন্স খাবারে সুগন্ধ আনে। জরদা, ফিরণী, সেমাই, হালুয়া, পোলাও, কোরমা এসব রান্নায় গোলাপজল, কেওড়া, জাফরাণ এর ব্যবহার বহু আগে থেকেই প্রচলিত। ভেনিলা এসেন্স ছাড়া লেমন, পাইন এ্যাপেল, অরেঞ্জ, বেনানা, স্ট্রবেরী ইত্যাদি এসেন্স আইসক্রীম, পুডিং, কাস্টার্ড, কেক, বিস্কুট, পেস্ট্রি, জ্যাম, জেলী, মার্মালেড এবং স্কোয়াসে দেয়া হয়। রেসিপির নির্দেশমতো খাবারে এসেন্স খুব সামান্য পরিমাণে দিতে হবে। দৈনন্দিন খারে এসেন্স ব্যবহর করা উচিত নয়।

 

* ফুড কালার বা খাওয়ার রং: খাবারের রং উজ্জ্বল করে উন্নত করার জন্য খাওয়ার রং দেয়া যায়। লেমন স্কোয়াস, পাইন এ্যাপেল স্কোয়াস, গ্রীণ ম্যাংগো স্কোয়াসে সামান্য রং দিলেই স্কোয়াসের ফ্যাকাসে ভাব দূর হয়। কেক, পেস্ট্রি, ডেকোরেশনে বা সাজাবার কাজে খাওয়ার রঙের ব্যবহার প্রচলিত। খাবারের রং হালকা হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আজকাল বাজারে নানা ধরণের চড়া রঙের ব্যবহার দেখা যায়। বেশি ফুড কালারের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খাওয়ায় রঙের মধ্যে লেমন কালার, এ্যাপেল গ্রীণ, স্ট্রবেরী, এগ ইয়েলো কালার এর নাম করা যায়।

 

জেলাটিন: জমানো ঠাণ্ডা খাবার তৈরিতে শুষ্ক চূর্ণ জেলাটিন ব্যবহার করা হয়। কেবল আনারস ছাড়া অন্য সবরকম ফল, সবজি এবং মাছ-মাংসের সঙ্গে জেলাটিন জমানো যায়। জলাটিন জমানোর জন্য দু'কাপ পরিমাণ পানিতে ১ টে, চামচ জেলাটিনপ্রয়োজন। প্রথমে আধ কাপ পানিতে জেলাটিন ভিজিয়ে, অবশিষ্ট পানি ফুটিয়ে নিয়ে জেলাটিন গুলে ফ্রিজে রাখলে দুই থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে জমে যায়। একটা কথা এখানে উল্লেখ না করলে নয় যে, জেলাটিন ফ্রিজে জমাতে হয়, বরফে নয়। জমানো সালাদ এবং সুফলে পুডিং জেলাটিন দিয়েই তৈরি হয়।

 

* ফুড প্রিজারভেটিভ বা খাদ্য সংরক্ষক: তৈরি খাবার জীবানুর সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে সংরক্ষণের সময় প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়। প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ (Bangladesh pure food Act & Rules) অনুযায়ী সংরক্ষক দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে। অধ্যাদেশের বিধিমতে (১) সোডিয়াম বেনজোয়েট এবং (২) পটাসিয়াম- মোটা-বাইসালফাইট এ দুটি সংরক্ষক দ্রব্য ব্যবহার করা বৈধ। জ্যাম, জেলী, স্কোয়াস, মার্মালেড, টমেটো সস ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য খাবারে ১ শতাংশ সংরক্ষক দ্রব্য দেয়ার নিয়ম, অর্থাৎ ১ কিলোগ্রাম জ্যামে এক গ্রাম সোডিয়াম বেনজোয়েট বা পটাসিয়াম-মোটা-বাই-সালফাইট দেয়া বিধি সম্মত। উভয় সংরক্ষক দ্রব্যই সাদা রঙের মিহি গুঁড়া যা পানিতে দ্রবণীয় অবস্থায় পাওয়া যায়।


( উপরের কিছু তথ্য ২০০৪ সালের আধুনিক খাদ্য পুষ্টি ও রান্না শিক্ষা বই থেকে নেয়া )

 

 

No comments